প্রবাসী ভোটারের ভোট দেওয়ার অ্যাপ ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ র উদ্বোধন
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রবাসী ভোটারের ভোট দেওয়ার অ্যাপ ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ র উদ্বোধন করলো নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মাধ্যমে প্রবাসী ভোটারের পাশাপাশি দেশে ভোটের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, নিজ এলাকার বাইরে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবী ও আইনি হেফাজতে থাকা ভোটাররাও ভোট দিতে পারবেন।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সন্ধ্যায় এই অ্যাপ উদ্বোধন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, “বর্তমানে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ প্রবাসে বসবাস ও বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছেন। এতদিন প্রবাসীরা ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত হতেন। এই উদ্যোগ তাদের ভোটাধিকার বঞ্চনার অবসান করলো।”
সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, “তাদের ভোট দেওয়ার মাধ্যমে গণতন্ত্রের ভিত্তি আরও বিস্তৃত, আরও প্রতিনিধিত্বশীল হবে। সবার ভোটাধিকার নিশ্চিতে নির্বাচন কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটা কেবল একটা অ্যাপ নয়, এটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। যা বৈশ্বিক গণতন্ত্রের দরজা খুলে দিচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সংশ্লিষ্ট সকলকে সঙ্গে নিয়ে এটি বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তিন মাসের কিছু বেশি সময় নিয়ে মোবাইল অ্যাপ তৈরির মতো একটি কাজ আমরা সম্পন্ন করেছি। এটিকে আমরা দূঃসাহসের সঙ্গে বিবেচনা করছি। এটি একটি আইটি সাপোর্টেড সিস্টেম। যেটি ভোট প্রদানের জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া অনলাইন আর প্রদানের কার্যক্রম ম্যানুয়েল “
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইসি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, “প্রবাসীদের নিবন্ধনে আমাদের বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ আছে। প্রথমটি হলো, নিবন্ধনের হার। সারাবিশ্বে প্রবাসী ভোটারদের গড় নিবন্ধনের হার ২ দশমিক ৭ শতাংশ। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হলো, ব্যালট ওয়েস্টেজ রেট। গ্লোবাল ওয়েস্টেজে রেট হলো, ২৪ শতাংশ। প্রতি চারটিতে একটি ব্যালট নষ্ট হয়।”
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, “আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো সাইবার নিরাপত্তা। সারা বিশ্বে দেখা যায়, এই ধরনের ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অন্তত পাঁচ বছর ট্রায়াল করে দেখা হয়। আমরা ট্রায়াল করেছি এক মাসও হয়নি। তবে আমরা নিশ্চতি করছি, এমন কোনও ত্রুটি যেন না থাকে যা ভোটকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।”
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপ দেশের ভিতরে এবং বাংলাদেশীদের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার পথে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। একটি পূর্ণাঙ্গ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষে দেশের এবং বিদেশের বসবাসরত ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতেই নির্বাচন কমিশন এই আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালট ভোটদান ব্যবস্থা চালু করেছে। অ্যাপে নিবন্ধন করে ভোটারগণ ডাকযোগে ব্যালট পাবেন এবং ভোট প্রদান করে ফিরতি ডাকে তার রিটার্নিং অফিসারের নিকট প্রেরণ করবেন। এই উদ্যোগ শুধু একটি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নয়, এটি বাংলাদেশের সার্বজনীন ও অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রণ গণতন্ত্রের মাইলফলক।”
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে আউট অব কান্ট্রি ভোটিং সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন প্রজেক্টের প্রধান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) সালীম আহমাদ খান পুরো ভোটিং প্রক্রিয়া তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “তফসিল ঘোষণার পরে প্রবাসে ব্যালট পেপার চলে যাবে বাংলাদেশ থেকে। প্রবাসীদের কার্যক্রমের শেষের দিকে দেশের তিন ধরনের ব্যক্তির (অ্যাপে নিবন্ধিত) ঠিকানা ধরে পোস্টাল ব্যালট পাঠানোর কাজ শুরু হবে।”
তিনি বলেন, “তফসিল ঘোষণার পর এখান থেকে ব্যালট পাঠানো শুরু হয়ে যাবে, যাতে প্রতীক বরাদ্দের আগেই পোঁছে যায়। আর বরাদ্দের পর ভোটার নিজের ফোনের মোবাইল অ্যাপে প্রার্থী দেখে ভোটটা দিয়ে দেবেন। তারপর আবার ডাকযোগে পাঠাবেন।”
ভোটের প্রক্রিয়া হবে যেভাবে
নিবন্ধন ও ভোট দান প্রক্রিয়া নিয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকেই প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছে ইসি। মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড, নিবন্ধন, ডাকযোগে ব্যালট পাঠানো, ভোট প্রদান এবং ডাকযোগে ব্যালট ফেরত আসা পর্যন্ত ৫ ধাপে শেষ হবে এ প্রক্রিয়া।
নিবন্ধনের জন্য প্রবাসীদের গুগল প্লে স্টোর বা আইফোনের অ্যাপ স্টোর থেকে “পোস্টাল ভোট বিডি” অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। এরপর লগইন করে অ্যাকাউন্ট তৈরি করার সময় মোবাইল নম্বর প্রবেশ করাতে হবে। সেই নম্বরে আসা ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) দিয়ে নম্বর নিশ্চিত করতে হবে।
এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হাতে নিয়ে সেলফি তোলা এবং আলাদাভাবে এনআইডির ছবি জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি পাসপোর্ট থাকলে তার ছবিও দিতে হবে। শেষে বিদেশে বর্তমান ঠিকানার তথ্য দিলে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হবে। তথ্য যাচাই শেষে “আপনি এখন নিবন্ধিত” বার্তা অ্যাপে দেখা যাবে।
এরপর অপেক্ষা থাকবে কেবল ব্যালট পেপারের জন্য। নিবন্ধন শেষ হলে সেই তথ্য সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চলে যাবে। এরপর পৃথক ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হবে। নির্ধারিত সময়ে ভোটারের ঠিকানায় তিন খামের ভেতর ব্যালট পাঠানো হবে। একটি খামের ভেতরে থাকবে ব্যালট পেপার, আরেকটিতে আসন নম্বর ও রিটার্নিং কর্মকর্তার ঠিকানা উল্লেখ থাকবে। ভোটার ব্যালট পেপারে ভোট দিয়ে দ্বিতীয় খামে ভরে নিকটস্থ পোস্ট বক্সে জমা দিলেই ভোটের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
খাম পাওয়ার পর ভোটারকে তার অ্যাপে লগইন করে মোবাইল নম্বর নিশ্চিত করতে হবে, নিজের ছবি তুলতে হবে এবং খামের ওপর থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করতে হবে। এতে প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর আসনের সব প্রার্থীর নাম দেখা যাবে। এরপর খাম খুলে ব্যালটে ভোট দিয়ে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে। ব্যালট খামে ভরে তা নিকটস্থ পোস্ট অফিসে জমা দিলেই ভোট সম্পন্ন হবে।
প্রবাসী নিবন্ধন কোন অঞ্চলে, কবে?
সাতটি অঞ্চলে ভাগ করে এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলবে ১৯ নভেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এই ৩৫ দিনে পাঁচদিন করে নিবন্ধনের সময় দেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়া পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকা অঞ্চলে চলবে ১৯ নভেম্বর থেকে ২৩ নভেম্বর। উত্তর আমেরিকা ও ওশেনিয়া অঞ্চলে নিবন্ধন চলবে ২৪ থেকে ২৮ নভেম্বর। ইউরোপে নিবন্ধন চলবে ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর। মধ্যপ্রাচ্যে নিবন্ধন চলবে ৪ থেকে ৮ ডিসেম্বর। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে নিবন্ধন চলবে ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর। মধ্যপ্রাচ্য (সৌদি আরব বাদে) ১৪ থেকে ১৮ ডিসেম্বর। এ ছাড়া বাংলাদেশেরে সরকারি কর্মকর্তারা, নির্বাচনী দায়িত্বের কর্মকর্তা, আইনের আওতাধীন ব্যক্তিরা ১৯ থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন।
কমেন্ট বক্স